বাংলাদেশের সর্বদক্ষিনে খুলনা হতে প্রায় ৫৫.০০ কি:মি: দুরত্বে সমুদ্র থেকে খুবই নিকটবর্তী (প্রায় ৫০.০০ কি:মি) বাংলাদেশের দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দর মোংলাকে কেন্দ্র করে পশুরনদীর কোলঘেষে ততকলীন চাঁদপাই ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন হতে ২১.৩৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকার সমন্বয়ে গড়ে উঠে অপার সম্ভাবনাময় মোংলা পোর্ট পৌরসভা। নানা কারনে এ পৌরসভার গুরুত্ব অনেক। বিশেষ করে সুন্দরবন যা পৃথিবীর সর্ববৃহত ম্যানগ্রোভ বনভূমি হিসেবে পরিচিত, প্রকৃতির এই নিস্ব:র্গভান্ডার মোংলা পোর্ট পৌরসভার কাছাকাছি হওয়ার কারনে বসন্ত ও শীত মৌসুমে অসংখ্য দেশীবিদেশী পর্যটকদের আগমনে এ অঞ্চলটি মুখরিত থাকে। তাছাড়া ভ্রমন পিপাষুদের দর্শনীয়স্থান যেমন; হিরণপয়েন্ট, আকরাম পয়েন্ট, দুবলারচর, আলোর কোল, হারবাড়িয়া, করমজল,কটকা, কচিখালী, টাইগার পয়েন্ট, জয়মনিরঘোল, এবং সুন্দরবনের অভ্যন্তরিন অনেক প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য দেখার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান হতে তথা বিভিন্ন দেশের পর্যটকগণ মোংলা পোর্ট পৌরসভা হয়ে এ স্থান পরিদর্শন করে থাকেন। যে কারনে এ পৌরসভাটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও বিভিন্ন দেশের কাছে অনেক গুরুত্ব বন করে কিন্তু অমিত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উন্নয়ন ও প্রচেষ্টার অভাবে গুরুত্ত্বপূর্ণ এই পৌরসভাটি ক্রমান্বয়ে পশ্চাতপদ হয়ে রয়ে গেছে। সেই ১৯৭৫ সাল হতে পৌরসভা সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে যথাযথ উন্নয়নের অভাবে নানা রকম সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে। বিগত পৌর পরিষদের অপরিকল্পিত কার্যক্রম এবং সীমাহীন উদাসিনতার কারণে পৌরসভাটি সবচেয়ে পিছিয়ে পড়েছিল। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় পৌর শ্রীবৃদ্ধিতে কোন পালক যোগ হয় নি। বিগত দিনে ২০০০ সালের দিকে কিছু রাস্তাঘাট ও ড্রেন, কালভার্ট করা হয়েছিল সাথে সাথে একটি বাস টার্মিনাল ও একটি কিচেন মার্কেট করা হয়েছিল যেগুলো পৌরসভার অর্থনৈতিক উন্নয়নের তেমন কোন কাজে আসে না। সে সময়ের রাস্তা ঘাট ও অবকাঠামো গুলো প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও জলোচ্ছ্বাস আইলার কারণে ধ্বংশ প্রায়।বিশেষ করে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পৌরসভার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খাল গুলিরমুখে সুইচ গেট না থাকা পৌরসভার একটি মূল সমস্যা। যার কারণে জোয়ারের সময় পৌরসভার রাস্তা ঘাট ১/২ ফুট পানির নীচে তলিয়ে যায় তখন মানুষের ভোগান্তির সীমা থাকে না। আর রাস্তা ঘাটের দৈন্যদশার কারণ মানুষ জন ও যানবাহন চলাচলের পথে নানা রকম দুর্ঘটনায় অনেকেই পঙ্গুত্ত্বের শিকার হয়। একটি সুপরিকল্পিত নগর গঠনের লক্ষ্যে হাতে নিয়েছি যানজট মুক্ত প্রশস্ত রাস্তা, রাস্তার পাশে এস এস পাইপের রেলিংও সিরামিক ইটে মোড়ানো নান্দনিক ফুটপথ যা পৌরসভার শোভা বর্ধন করবে। সবচেয়ে বেশিগুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উন্নত ড্রেনেজ সিস্টেমের প্রতি যা পৌরসভাকে জলাবদ্ধতা হতেমুক্ত করবে। নেয়া হয়েছে পৌরসভার বিভিন্ন রাস্তার পাশে পর্যাপ্ত সড়ক বাতির ব্যবস্থা। বিভিন্ন ওয়ার্ড ভিত্তিক সুইপার নিয়োগ করে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সরাসরি নজর দারিতে আবর্জনা অপসারন ব্যবস্থা, মশক নিধন এর জন্য ফগার মেশিন দিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন সময়ে নিয়মিত স্প্রে করে পৌরবাসীকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। চিত্ত বিনোদন এর নেয়া হয়েছে নানা রকমের উদ্দ্যোগ।
পৌরসভার কোমলমতি ছেলে/মেয়েদের মানসিক বিকাশের জন্য তৈরি করা হয়েছে শিশুপার্ক। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য নিয়মিত বিভিন্ন রকম বৃক্ষ রোপন প্রকল্প সহ মাসব্যাপী বৃক্ষরোপন কার্যক্রম গ্রহন করা হচ্ছে। পৌরবাসীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এবং যানজট নিরসনে মোংলা থানা পুলিশ এর পাশাপাশি সিকিউরিটি কর্মী মোতায়ন করা হয়েছে। পৌরসভার সব সেক্টরকে অনলাইন কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। জনগণের টাকা সরাসরি গ্রহন না করে ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহন করা হচ্ছে। অফিসে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা, অত্যাধুনিক টাইম এটেন্ডেস মেশিন ও দেয়া হচ্ছে ইন্টারনেট সুবিধা এবং ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে পৌর দাপ্তরিক কর্মকান্ডের আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
এছাড়াও মোংলা পোর্ট পৌরসভায় আছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত ৮৩.৯৪ একর জমির উপর এনভায়রনমেন্ট ও স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। যার মাধ্যমে প্রায় ২৭০৫ পরিবারকে সরাসরি এবং জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত পানির ট্যাপের মাধ্যমে আরও প্রায় ১০০০ পরিবার ও মসজিদ, মন্দির, গীর্জায় নিয়মিত ভাবে সুপেয় খাবার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় প্রায় ৩৭ কি:মি: পাইপ লাইন সংযুক্ত আছে। ভবিষ্যতে পৌরবাসীকে শতভাগ সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ শুরুর অপেক্ষায় আছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পৌরবাসীর সুপেয় পানির সীমাহীন কষ্ট লাঘবে শতভাগ সাফল্য আসবে বলে মনে করি। বর্তমানে মোংলা পোর্ট পৌরসভার বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নে মূলক কাজ চলমান আছে।