মোংলা পোর্ট পৌরসভা বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় আর্ন্তজাতিক সমুদ্র বন্দর মোংলার প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত প্রথম শ্রেনীর একটি পৌরসভা। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিনে খুলনা হতে প্রায় ৫৫.০০ কি:মি: দুরত্বে সমুদ্র থেকে খুবই নিকটবর্তী (প্রায় ৫০.০০ কি:মি) বাংলাদেশের দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দর মোংলাকে কেন্দ্র করে পশুরনদীর কোলঘেষে ততকলীন চাঁদপাই ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন হতে ১৯.৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকার সমন্বয়ে গড়ে উঠে অপার সম্ভাবনাময় মোংলা পোর্ট পৌরসভা, পরবর্তীতে আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমান আয়তন ২১.৩৩ বর্গ কিঃ মিঃ। নানা কারনে এ পৌরসভার গুরুত্ব অনেক। বিশেষ করে সুন্দরবন যা পৃথিবীর সর্ববৃহত ম্যানগ্রোভ বনভূমি হিসেবে পরিচিত, প্রকৃতির এই নিস্ব:র্গ ভান্ডার মোংলা পোর্ট পৌরসভার কাছাকাছি হওয়ার কারনে বসন্ত ও শীত মৌসুমে অসংখ্য দেশীবিদেশী পর্যটকদের আগমনে এ অঞ্চলটি মুখরিত থাকে। তাছাড়া ভ্রমন পিপাষুদের দর্শনীয় স্থান যেমনঃ হিরণপয়েন্ট, আকরাম পয়েন্ট, দুবলারচর, আলোর কোল, হারবাড়িয়া, করমজল, কটকা, কচিখালী, টাইগার পয়েন্ট, জয়মনিরঘোল এবং সুন্দরবনের অভ্যন্তরিন অনেক প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য দেখার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান হতে তথা বিভিন্ন দেশের পর্যটকগণ মোংলা পোর্ট পৌরসভা হয়ে এ স্থান পরিদর্শন করে থাকেন। যে কারনে এ পৌরসভাটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও বিভিন্ন দেশের কাছে অনেক গুরুত্ব বহন করে। সুন্দরবন অত্র এলাকাবর্তী হওয়ায় মোংলা পোর্ট পৌরসভা ইতিমধ্যে পর্যটন নগরী হিসেবে পরিগনিত হয়েছে। মোংলা বন্দর, অর্থনৈতিক জোন, ইপিজেড সহ বেসরকারী খাতে নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপিত হওয়ায় অত্র এলাকার গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এলাকায় জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মোংলা পোর্ট পৌরসভার আয়তন ২১.৩৩ বর্গ কিঃ মিঃ এবং পৌর এলাকায় বর্তমানে লক্ষাধিক লোক বসবাস করে এবং প্রতিদিন কর্মসংস্থানের জন্য ৫০ হাজার লোক আসা যাওয়া করে।

১৯৭৫ সালে সৃষ্টি হওয়ার ৪৭ বছর পর মাননীয় মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পৌরভবনের জন্য জমি বরাদ্দ প্রদান করলেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। মোংলা পোর্ট পৌরসভা ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে জমি বরাদ্দ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হতে মোংলা পোর্ট পৌরসভার পৌর ভবন নির্মাণের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে এবং ভবন নির্মানের বরাদ্দ প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান। ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত পৌর ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশব্যাপী উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতায় মোংলা পোর্ট পৌরসভাকে আধুনিক মানের করার জন্য দেশী বিদেশী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রনয়ন ও সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে পৌরসভার সিআরডিপি-২ প্রকল্পের আওতায় রাস্তা, ড্রেন ও কালভার্টসহ পৌরসভার সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ চলমান। একই সাথে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের অধিনে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্ট এর অর্থায়নে গ্রীন হাউজ গ্যাস নি:সরন কমানো ও মোংলা পোর্ট পৌরসভাকে আলোকিত করার লক্ষ্যে সৌর বিদ্যুতায়িত ১৫০টি সড়ক বাতি স্থাপনের কাজ চলছে। কোভিড-১৯ প্রজেক্ট এর আওতায় মোংলা পোর্ট পৌরসভায় ২, ৩ ও ৭ নং ওয়ার্ডে বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ও ড্রেনের কাজ চলমান। এছাড়াও  পৌরসভার পানি সরবরাহ প্রকল্পসহ আরও কয়েকটি প্রকল্পের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে পৌরবাসী উন্নয়নের সুফল ভোগ করবে ইনশাল্লাহ। 

একটি সুপরিকল্পিত নগর গঠনের লক্ষ্যে সিআরডিপি সহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় যানজট মুক্ত প্রশস্ত রাস্তা, রাস্তার পাশে এস এস পাইপের রেলিং ও সিরামিক ইটে মোড়ানো নান্দনিক ফুটপথ তৈরি করা হয়েছে, যা পৌরসভার শোভা বর্ধন করছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উন্নত ড্রেনেজ সিস্টেমের প্রতি যা পৌরসভাকে জলাবদ্ধতা হতে মুক্ত রাখছে এবং পূর্বে জোয়ারের পানিতে পৌর এলাকা প্লাবিত হলেও  স্লুইস গেট নির্মান করায় সে সমস্যা সমাধান হয়েছে। পৌরসভার বিভিন্ন রাস্তার পাশে পর্যাপ্ত সড়ক বাতির ব্যবস্থা ও সোলার বাতি স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ড ভিত্তিক সুইপার ও ময়লা সংগ্রহের জন্য ভ্যান চালক নিয়োগ করে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সরাসরি নজরদারিতে বাড়ি বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ নিয়োগ করে আবর্জনা অপসারনের ব্যবস্থা, মশক নিধন এর জন্য ফগার মেশিন দিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন সময়ে নিয়মিত স্প্রে করা হচ্ছে। এছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য প্রস্তাবিত “শেখ রাসেল পৌর শিশু পার্ক”  নিমার্ণ করার কার্যক্রম চলমান আছে।

পৌরসভার কোমলমতি ছেলে/মেয়েদের মানসিক বিকাশের জন্য তৈরি করা হয়েছে শিশুপার্ক। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য নিয়মিত বিভিন্ন রকম বৃক্ষ রোপন প্রকল্প সহ মাসব্যাপী বৃক্ষরোপন কার্যক্রম গ্রহন করা হচ্ছে। পৌরবাসীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এবং যানজট নিরসনে মোংলা থানা পুলিশ এর পাশাপাশি সিকিউরিটি কর্মী মোতায়ন করা হয়েছে। পৌরসভার সব সেক্টরকে অনলাইন কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। জনগণের টাকা সরাসরি গ্রহন না করে ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহন করা হচ্ছে। অফিসে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা, অত্যাধুনিক টাইম এটেন্ডেস মেশিন ও দেয়া হচ্ছে ইন্টারনেট সুবিধা এবং ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে পৌর দাপ্তরিক কর্মকান্ডের আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

এছাড়াও মোংলা পোর্ট পৌরসভায় আছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত ৮৩.৯৪ একর জমির উপর এনভায়রনমেন্ট ও স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। যার মাধ্যমে প্রায় ২৭০৫ পরিবারকে সরাসরি এবং জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত পানির ট্যাপের মাধ্যমে আরও প্রায় ১০০০ পরিবার ও মসজিদ, মন্দির, গীর্জায় নিয়মিত ভাবে সুপেয় খাবার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় প্রায় ৩৭ কি:মি: পাইপ লাইন সংযুক্ত আছে। ভবিষ্যতে পৌরবাসীকে শতভাগ সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ শুরুর অপেক্ষায় আছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পৌরবাসীর সুপেয় পানির সীমাহীন কষ্ট লাঘবে শতভাগ সাফল্য আসবে বলে মনে করি। বর্তমানে মোংলা পোর্ট পৌরসভার বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নে মূলক কাজ চলমান আছে। 

করোনা মহমারীর পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে দ্রব্যমূলের উর্দ্ধগতি ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এই সংকটের মধ্যেও বর্তমান পৌর পরিষদ অগ্রাধিকার বিবেচনায় মোংলা পোর্ট পৌরসভার প্রান্তিক পর্যায়ের জনসাধারনের দূর্ভোগ লাঘবের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যে সকল প্রান্তিক এলাকায় রাস্তা-ঘাট, ড্রেন ছিলো না, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সে-সকল অবহেলিত এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমরা ওয়ার্ড পর্যায়ে জনসাধারনের সাথে আলোচনা করেছি, তারা যে সকল সমস্যা জানিয়েছেন, তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন। 

ইতিমধ্যে বিএমডিএফ এর অর্থায়নে দিগরাজ মাল্পিপারপাস বিল্ডিং, বাউন্ডারী মার্কেট ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে এবং দিগরাজ কিচেন মার্কেট নির্মানের কাজ প্রক্রিয়াধীন। কাজ সমূহ সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়ে হোটেল, ব্যাংক ও মার্কেট চালু হলে, অত্র এলাকার জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং পৌরসভার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। ট্রাক টার্মিনাল টি মোংলার স্থায়ী বন্দর এলাকার যানজট নিরসনে গুরুপ্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। 

এছাড়া, বিএমডিএফ এর অর্থায়নে পৌর শহর এলাকায় পৌর মাকের্ট কাম কমিউনিটি সেন্টারের ২য় তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে নিচ তলার দোকান সমূহ ভাড়া প্রদান করা হয়েছে এবং ২য় তলার একটি অংশ ব্যাংকের নিকট ভাড়া প্রদান করা হয়েছে এবং অবশিষ্টাংশে পৌরসভার অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্থাপনাটি সম্পূর্ণভাবে নির্মিত হলে, অত্র এলাকার জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং পৌরসভার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

এছাড়াও বর্তমানে আরও নানামুখী কার্যক্রম গ্রহন করেছি যা বাস্তবায়নের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তারমধ্যে আছে গুনীজন সম্বর্ধনা, শ্রেষ্ঠ প্রাক্তন শিক্ষকদের সম্বর্ধনা, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পুরষ্কার প্রদান, নিয়মিত খেলাধূলার ব্যবস্থা গ্রহন, অসুস্থ ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগীতা করা, মৃত-অসহায় ব্যক্তিদের দাফন কাফনের ব্যবস্থা ও প্রতি মাসে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কবরস্থান মসজিদে দোয়া ও তাবারক বিতরন, অসহায় গরীবদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরন করা ও ভেড়ী বাধের দুই পাশে এবং পানি সরবরাহ প্রকল্পে বৃক্ষ রোপন করে নির্মল পরিবেশ সৃষ্টিসহ নাগরিকদের সুবিধার্থে অনেক কাজ চলমান আছে।

এছাড়াও বর্তমানে আরো নানামুখী কার্যক্রম গ্রহন করেছি যা বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, বধ্যভূমি নির্মাণ, রিসোর্ট নির্মাণ, খেলাধুলার মান বৃদ্ধি ও প্রসারের জন্য একটি আধুনিক মানের ষ্টেডিয়াম নির্মাণ, ঈদের নামায পড়ার জন্য ঈদগাহ ময়দান আধুনিকায়ন, যাত্রী পারাপারের জন্য নান্দনিক যাত্রী ছাউনী নির্মাণ, পৌরসভার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আধুনিকায়ন ও পৌরসভার বিভিন্নস্থানে সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ। কবরস্থান ও শশ্মানের আধুনিকায়নের কাজও করতে যাচ্ছি।

অবশেষে আমার সংক্ষিপ্ত সময়ে দলমত নির্বিশেষে সকলের সহযোগীতা পেলে একটি আধুনিক পর্যটন নগরী তথা মডেল পৌরসভা উপহার দেবো। আমি একটি সুন্দর নগরীর স্বপ্ন দেখি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য চাই সাজানো ফুলের বাগানের মত নগর। মোংলা পোর্ট পৌরসভা হোক সেই স্বপ্নের মহানগরী। সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় সবাইকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। 

ধন্যবাদ